ডিজিটাল হচ্ছে ডিআইএর সব ফাইল

ডিজিটাল হচ্ছে ডিআইএর সব ফাইলপ্রকাশিত : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) থরে থরে ফাইলের জঞ্চাল থাকবে না। চলতি মাসেই ‘ই-নথি ব্যবস্থাপনা’র মাধ্যমে ডিআইএর সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষার জন্য ১৯৮০ সালে ডিআইএ প্রতিষ্ঠার পর থেকে সব ফাইল ডিজিটাল ভার্সনে রূপান্তর করা হবে। ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।

জানতে চাইলে ডিআইএর যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার আজকালের খবরকে বলেন, ‘বর্তমানে অটোমেশন সফটওয়ারের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের অনুমোদন দেওয়া হয়। পরিদশর্নেরে চিঠি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন কর্মকর্তাকে ই-মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। পরিদর্শন কর্মকর্তাদের পুরাতন ফাইলের কোনো তথ্য দরকার হলে ই-নথি ব্যবস্থাপনা সফটওয়ারের সুপার অ্যাডমিন তা অনুমোদন দিবেন। পরিদর্শন কর্মকর্তার ফাইলের কত পৃষ্ঠা দরকার হবে তা অ্যাডমিন অনুমোদন দিবেন। ফাইলের অনুমোদিত তথ্যের বাইরে পরিদর্শন কর্মকর্তাও অন্য তথ্য দেখতে পারবেন না। কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিদর্শন কর্মকর্তার ফাইল দেখার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। সুপার অ্যাডমিনের অনুমোদন ছাড়া অন্য কেউ ফাইল দেখতে পারবেন না। সফটওয়ার থেকে ফাইলের কোনো তথ্য ই-মেইল বা ফটোকপি করতে পারবেন না। ডিআইএর নির্দিষ্ট কম্পিউটার ছাড়া সফটওয়ারটিতে ঢোকা যাবে না। এতে করে ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ডিআইএ প্রতিষ্ঠার পর থেকে সব ফাইল সফটওয়ারের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। আমাদের অফিসে আর ফাইল থাকবে না। পুরতান ফাইলগুলো গুদামে সংরক্ষণ করা হবে। এর মাধ্যমে ডিআইএ দেশের প্রথম শতভাগ ডিজিটাল ও স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।’

সামান্য টাকায় সফরওয়ারটি তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে বিপুল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘চলতি মাসে কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ডিজিটাল এই কার্যক্রম শুরু হবে। চার জন মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করা হবে। আমাদের প্রতিটি উইং এ হাইস্পিট স্কানার আছে। এই মেশিন দিয়ে পুরাতন ফাইলগুলো পিডিএফ এ রূপান্তর করবেন কর্মচারীরা। এতে বাড়তি খরচ হবে না।’

ডিআইএ সূত্রে জানা গেছে, অডিট রিপোর্টে প্রতিষ্ঠানের আয়-বায় সংক্রান্ত নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য থাকে। অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ ফাইল হারিয়ে বা চুরি হয়ে যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যাওয়ার আগে আগের পুরাতন ফাইল খুঁজে পাওয়া যায় না। দুর্নীতি তথ্য-প্রমাণ থাকায় কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিসের ফাইল অভিযুক্তদের দিয়ে দেয়। এছাড়া ফাইল প্রকাশ্যে দেখার সুযোগ থাকায় পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই ডিআইএর এক শ্রেণির অসাধু কর্মচারী প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে ফোন করে জানিয়ে দেয়। টাকার বিনিময়ে ফালই গায়েব বা অভিযোগ থেকে মুক্ত করার চুক্তি করেন। এই দুর্নীতি বন্ধ করতেই ফাইলগুলো ডিজিটাল রূপান্তর করা হচ্ছে।

ডিআইএ সূত্র আরও জানায়, পরিদর্শন কর্মকর্তাদের প্রত্যেকে চারটি জেলার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের দায়িত্ব পালন করেন। তারা পরিদর্শন শেষে পতিবেদন দেন। প্রতিবেদন রিপোর্ট ফাইলে থাকায় প্রকাশ্যে দেখার রয়েছে। এ সুযোগে কিছু কর্মচারী তথ্য ফাঁস করে দেন। ফোন করে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের কাছে মোটা অংকের ঘুষ দাবি করেন।

প্রসঙ্গত, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিআইএ এক সময়ে ঘুষ দুর্নীতির আকড়া ছিল। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছে আতঙ্ক ছিল ডিআইএর পরিদর্শন কর্মকর্তারা। পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষকদের কাছে অন্তত দুই মাসের বেতন ঘুষ হিসেবে দাবি করতেন। না দিলেই বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়ে এমপিও বন্ধের হুমকি দিতেন। বিপুল চন্দ্র সরকার ডিআইএর যুগ্ম পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই প্রযুক্তির ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটিকে শতভাগ কলঙ্গমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তারা নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছ ইমেজ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।

আজকালের খবর