ই-কমার্স উদ্যোক্তা’ রা হুমকির মুখে

মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় ‘লেনদেন সীমা কমিয়ে নির্দিষ্ট’ করায় হুমকির মুখে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুককেন্দ্রিক দেশের ১০ হাজার ই-কমার্স উদ্যোক্তা। এসব উদ্যোক্তার বেশিরভাগের ক্ষুদ্র ও মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট না থাকায় পণ্য বিক্রি করে তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সীমার বেশি অর্থ তুলতে পারছেন না। ফলে পণ্য বিক্রি করেও ক্যাশ-আউট করতে সমস্যায় পড়ছেন তারা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নিয়মে ব্যক্তিগত হিসাব থেকে দিনে ১০ হাজার টাকার বেশি টাকা তোলা যাচ্ছে না। তবে মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টে লেনদেনের অর্থ পরিশোধে কোনও সীমা নির্ধারিত নেই। কিন্তু ফেসবুকনির্ভর ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগেরই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নেই। ব্যক্তিগত হিসাবে পেমেন্ট পেতে তাদের বেশ সমস্যা হচ্ছে।ই-কমার্স উদ্যোক্তা
ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নতুন নিয়মের ফলে ই-কমার্স খাতের বিক্রিও কমে গেছে।
ফেসবুক নির্ভর ই-কমার্স লুঙ্গিওয়ালার উদ্যোক্তা রেজাউল করিম বলেছেন, নতুন নিয়মের ফলে তার প্রতিষ্ঠানের বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উদ্যোক্তা জানান, নতুন নিয়মের পরিবর্তন না হলে তার উদ্যোগ বন্ধ করে দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আর কিছুদিন চললে এমন হাজারও প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। মার্চেন্ট হিসাব খোলার নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে অনেকে ব্যক্তিগত হিসাবের মাধ্যমে এমএফএস পদ্ধতিতে পেমেন্ট নিয়ে থাকেন।’
এ বিষয়ে রেড মেরুন নামের আরেক ই-কমার্স উদ্যোক্তা মোহাম্মদ রিয়াদ বলেন, ‘অনেক সমস্যা। আগে যেটা ছিল তাতেই সমস্যা ছিল অনেকের। আর এখন হঠাৎ করে অর্ধেক হওয়াতে তো বেশি সমস্যা। পেমেন্ট দিতে বেশি সমস্যা হয়।’
আরেক উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান রাজকুমারিবিডির সুলতানা জাহান নিশাত বলেন, ‘এই সীমাবদ্ধতার ফলে ব্যবসা সুষ্ঠুভাবে চালাতে সমস্যা হচ্ছে। প্রায়ই টাকা আটকে যাচ্ছে। এটিতো আমাদের কোনও অপরাধ নয়। আমরা ঠিক মতো ব্যবসা চালাতে চাই এবং বাংলাদেশ ব্যাংক যেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের দিকটাও ভাবে।’
কিনলেজবসের উদ্যোক্তা সোহেল মৃধা মনে করেন, নতুন নিয়ম ই-কমার্স শিল্পের বিকাশ ও অগ্রগতির অন্তরায়। মাত্র অল্প সংখ্যকবার পেমেন্টের পরে আর পেমেন্ট নেওয়া যাচ্ছে না। এটাকে আরও সহজ এবং ই-কমার্স শিল্পের জন্য অসংখ্যবার করা উচিৎ।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) তথা মোবাইল আর্থিক সেবা চালুর লক্ষ্য ছিল দরিদ্র ও ব্যাংকিং সেবার বাইরের বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিয়মতান্ত্রিক আর্থিক সেবা দেওয়ার মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা সচল করা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি সাপোর্ট, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিশ্রম এবং সাধারণ মানুষের আস্থার কারণে গ্রাহক ও লেনদেন দু’টিই বেড়ে সেবাটি একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে।
ই-কমার্স উদ্যোক্তারা বলছেন, এমএফএসকে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে ই-কমার্সসহ নানা ধরনের ব্যবসা বেড়েছে। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাদের ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পন্ন করছে তেমনি অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধ থেকে শুরু করে কর্মীদের বেতনও দিচ্ছে এর মাধ্যমে। ফলে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসকে কেন্দ্র করে এক ধরনের ডিজিটাল অর্থনৈতিক ইকো-সিস্টেম গড়ে উঠেছে। নতুন নির্দেশনার ফলে অনলাইনভিত্তিক ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো এরই মধ্যে সমস্যার মধ্যে পড়েছে।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর সভাপতি রাজীব আহমেদ বলেন, লেনদেনে সীমাবদ্ধতা আরোপ করায় ছোট উদ্যোক্তাদের খুবই সমস্যা হচ্ছে। তিনি ই-কমার্স উদ্যোগকে এই নিয়মের বাইরে রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা সরকারের নতুন নিয়মকে সমর্থন করি কিন্তু বিকাশমান এই খাতকে বাঁচানোর দায়িত্বও সরকারের। ১০ হাজার ক্ষুদ্র ই-কমার্স উদ্যোক্তার মাধ্যমে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এসব উদ্যোক্তা সমস্যা পড়লে কর্মক্ষেত্রের ভারসাম্য নষ্ট হবে।
ই-ক্যাব সভাপতি জানান, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ৯৯ শতাংশেরই মার্চেন্ট হিসাব নেই। ফলে একটি বৃহৎ অংশ উদ্যোক্তাকে সমস্যার মধ্যে ফেলে দিলে ই-কমার্স খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্স সনদ ছাড়া মার্চেন্ট হিসাব খুলতে দেয় না। অনেকেরই এসব না থাকায় ব্যক্তিগত হিসাব দিয়েই ই-কমার্স পরিচালনা করছেন।
রাজিব আহমেদ বলেন, দেশের ৬৪ জেলাতেই ই-কমার্স উদ্যোক্তা রয়েছে। এদের অনেকে উপজেলা পর্যায়েও বসবাস করছেন। ফলে ব্যাংক, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে তাদের পক্ষে পেমেন্ট গ্রহণ করা বড় ধরনের সমস্যা। সে ক্ষেত্রে এমএফএসই পেমেন্ট গ্রহণে তাদের পক্ষে সবচেয়ে সহজ উপায়।
দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের মুখপাত্র জাহেদুল ইসলাম বলেন, দনতুন নিয়মের ফলে প্রতিদিনের লেনদেনের ওপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।’ লেনদেনের পরিমাণ বা সংখ্যা উল্লেখ না করলেও তিনি বলেন, ‘প্রভাবটা আমরা বেশ বুঝতে পারছি। ক্ষুদ্র ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের সমস্যাটা বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় বেশিই।’

Source: http://www.dhakaprotidin.com/